Unordered List

শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬

জানা/অজানাঃ- "প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিলুপ্ত হওয়া এক অতিকায় দানবীয় প্রাণী ডাইনোসরের সাতকাহন"

 
ডাইনোসর! নামটা উচ্চারণ করতেই অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে আজ থেকে কোটি কোটি বছর পূর্বের এক ভয়ংকর দর্শন অতিকায় দানবীয় প্রাণীর ছবি। আধুনিক মানব সমাজ বর্তমানে যাদেরকে ড্রাগন নামে সব থেকে ভাল চেনে। আজ থেকে ২৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বে যাদের পদভারে প্রকম্পিত হতো আমাদের সুজলা, সুফলা, শষ্য-শ্যামলা সুন্দর এই পৃথিবী। সুদীর্ঘ ১৬ কোটি বছর যাবত যে প্রাণীটা এই পৃথিবীকে শাসন করেছে তাদের খেয়াল খুশি মত। অথচ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজ সেই ভয়ংকর প্রাণীটা আমাদের এই পৃথিবীর ইতিহাসের একটা
অংশ মাত্র। এখন শুধুমাত্র বই পুস্তক আর ইতিহাসের পাতায় ছাড়া যাদের অস্তিত্ব আর এই পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বেই তারা এই পৃথিবীতে বসবাস করার অধিকার হারিয়ে এখন শুধুমাত্র স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। আর তাদের স্মৃতি চিহ্ণ হিসাবে এই পৃথিবীল বুকে ফেলে রেখে গেছে তাদের মৃত শরীরের কঙ্কাল। যেটাকে বর্তমান বৈজ্ঞানীক ভাষায় 'জীবাশ্ম/ফসিল' বলা হয়।

আর আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বদৌলতে সেই সব জীবাশ্ম থেকে পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হচ্ছে, এই প্রাণীটা সম্পর্কে নানাবিধ বিস্ময়কর এবং অবাক করে দেওয়ার মত কিছু তথ্য! যে তথ্যগুলোর মাধ্যমে আমাদের মনে এই রহস্যময় প্রাণীটা সম্পর্কে জানার আগ্রহ যেন আরো লক্ষ গুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে! ডাইনোসর সম্পর্কে আমাদের মনে প্রতি নিয়তই বিভিন্ন প্রশ্ন অহরহ ঘুরপাক খাচ্ছে। যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর হয়তো কারো কারো কাছে অনেক সহজ সরল মনে হচ্ছে, আবার কারো কারো কাছে অনেক কঠিন। উদাহরণ সরুপ বলা যায়ঃ-

=> ঠিক কিভাবে সুন্দর এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হলো রহস্যময় এই প্রাণীটি?
=> এত বড় একটা প্রাণী? তাহলে নিশ্চই তাদের খাদ্য তালিকাও ছিল অনেক বৃহৎ আকারের?
=> এই বিস্ময়কর প্রাণীটি ঠিক দেখতে কেমন ছিল? খেতোই বা কি? আর থাকতোই বা কোথায়? আর
=> কেনই বা তাদের কে এই পৃথিবীতে আর দেখা যায় না? কিংবা এই পৃথিবী থেকে হঠাৎ করে তাদের সমূলে নিশ্চিহ্ণ হয়ে যাওয়ার মূল কারণটাই বা কি?


উপরোক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য বিগত কয়েকদিন যাবত আমি এই রহস্যময় প্রাণীটা সম্পর্কে অনেক বই পুস্তক এবং ইন্টারনেট ঘেটেছি। আর জানতে পেরেছি তাদের সম্পর্কে সেই সমস্থ প্রশ্নের উত্তর, যেগুলো আমাদেরই মনে এতদিন যাবত নানান ভাবে ঘুরপাক খচ্ছিল। এই রহস্যময় প্রাণীটা সম্পর্কে জানতে গিয়ে আমি নিজেই এমন কিছু তথ্য জানতে পেরেছি, যে তথ্যগুলো শুধু বিস্ময়করই নয়, সেই সাথে অবাকও করে দেওয়ার মত! আর ডাইনোসর সম্পর্কিত সেই সমস্থ তথ্য গুলোকে একত্রিত করে আজ আমি আমার ব্লগ পোস্টটাকে সাঁজিয়েছি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে এবং- "প্রাগৈতিহাসিক যুগে বিলুপ্ত হওয়া এক অতিকায় দানবীয় প্রাণী ডাইনোসরের সাতকাহন" নামে! তাহলে চলুন আর দেরি না করে আমরা ডাইনোসর সম্পর্কিত বিষয়ের মূল আলোচনায় ফিরে যাই--------------

পরিচিতি এবং পৃথিবীতে আগমনঃ- আজ থেকে প্রায় '২৩০ মিলিয়ন' বছর পূর্বে ট্রায়াসিক যুগের শেষ দিকে; অর্থাৎ এখান থেকে প্রায় ২৩ কোটি বছর আগে, বিশাল আকৃতির দানবীয় শরীরের অধিকারী এবং বর্তমান সময়ে আমাদের কৌতুহল জাগ্রতকারী অন্যতম প্রাণী ডাইনোসরেরা এই পৃথিবীতে বসবাস করতে শুরু করে। আর ওদের শাসনকাল চলে সুদূর ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষ পর্যন্ত। অর্থাৎ এক সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল ও বিরাট আর শক্তিশালী এ জন্তুটি পৃথিবীতে বিচরণ করেছিল প্রায়- '১৬০ মিলিয়ন বা ১৬,০০০০০০০ (ষোল কোটি)' বছর যাবত। কিন্তু ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে (ক্রিটেশিয়াস-টারশীয়ারী যুগ) পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগলিক সমস্যা ছাড়াও বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণে পৃ্থিবী থেকে এর বেশীরভাগ প্রজাতিরই বিলুপ্তি ঘটে। তবে বর্তমানে আকাশে উড্ডয়ন রত আমরা যে সকল পাখি দেখতে পাই, তাদেরকে ডাইনাসোরেরই কিছু প্রজাতির বিবর্তিত রূপ বলে ধারণা করা হয়। আজ পর্যন্ত ডাইনোসরের যে সকল ফসিল বা জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, তা থেকে বিশ্লেষিত তথ্য আমাদেরকে এই ধারণাই দেয় যে, বর্তমান সময়ে পৃথিবীতে বসবাসকারী পাখি সম্প্রদায়ই হলো 'থেরোপড (theropod)' ডাইনোসরেরই একটা বিবর্তিত রূপ।

ডাইনোসর-এর ক্রমবিকাশঃ- পৃথিবীতে এককোষী জীব থেকে শুরু করে বহুকোষী জটিল প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্রমবিকাশের ধারা চলে আসছে কোটি কোটি বৎসর ধরে। এই ক্রমবিবর্তনের ধারায়ই সৃষ্টি হয়েছিল চতুষ্পদী কিছু প্রাণী। সিলুরিয়ান (Silurian) অধিযুগে, ৪১ কোটি ৮০ লক্ষ বৎসর আগে 'সারকোপটেরিজাই' জাতীয় কিছু প্রাণী সাগরের জলে বসবাস করতো। পানিতে সাঁতার কাটার জন্য এই প্রাণিগুলোর মোট ৪টি পাখনা ছিল, যা দেখতে অনেকটা চতুষ্পদী প্রাণীর পায়ে মত। ১৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে এসে জীবাশ্ম বিজ্ঞানী Laurenti, আদিকালের সেই চার পেয়ে প্রাণিগুলোর নামকরণ করেছিলেন 'টেট্রাপোড (Tetrapod)' হিসাবে।

একসময়ে এসে টেট্রাপোডদের কিছু প্রাণী Amniote ডিম প্রসব করা শুরু করে। আর এই শ্রেণির প্রাণীর ডিম থেকে থেকে পরবর্তী সময়ে ডাইনোসারসহ অন্যান্য প্রাণীর উদ্ভিব ঘটে বলে ধারণা করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এর ক্ষুদ্রপর্ব (Microphylum) হিসাবে Amniota কে উল্লেখ করা হয়। আর ডিমের বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই ক্ষুদ্রপর্বকেই বিচার করা হয়। সাধারণত ডিমের কুসুমে থাকে ভ্রূণের খাবার। এই কুসুম এবং ভ্রূণকে ঘিরে থাকে এক ধরনের তরল পদার্থ। একে বলা হয় এ্যামনিয়ন (amnion)। যে সকল প্রাণীর ডিম এ্যামিওন-যুক্ত হয়, সে সকল ডিমকে বলা হয় এ্যামনিওটা (Amniota)। আর এদেরই সোরাপ্সিডা অতিক্ষুদ্র পর্ব থেকে সৃষ্টি হয়েছিল সরীসৃপ যেটাকে (Reptile) বলা হয়।

এই শ্রেণীর প্রাণীর ত্বক শুষ্ক ও আঁইশযুক্ত থাকে। সাধারণভাবে এই শ্রেণীর অন্তর্গত প্রাণীগুলোর মধ্যে, আমাদের অতি পরিচিত প্রাণীগুলো হলো— নানা রকমের সাপ, কুমির, টিকটিকি, কচ্ছপ ইত্যাদি। বিজ্ঞানীদের মতে ৩৪ কোটি বৎসর আগে, কার্বোনিফেরাস (Carboniferous) অধিযুগে- টেট্রাপোডদের একটি দল বিবর্তিত হয়ে সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। কার্বোনিফোরাস অধিযুগের শেষের দিকে, ৩০ কোটি বৎসর আগে, সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীকূল বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এর উল্লেখযোগ্য উপশ্রেণীগুলো হলোঃ-

০১। এ্যানাপসিডা (Anapsida) : উল্লেখযোগ্য প্রাণী কচ্ছপ।
০২। লেপিডোসোরিয়া (Lepidosauria) : একালের সাপ জাতীয় প্রাণী।
০৩। আর্কোসোরিয়া (Archosauria) : ডাইনোসরের শাখা।
০৪। প্যারাপসিডা (Parapsida) : ডাইনোসরের আবির্ভাবের পূর্ববর্তী একটি বিলুপ্ত শাখা।
০৫। আরিওস্কেলিডা (Araeoscelida) : এর সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।


নামকরণঃ- যদিও 'ডাইনোসর' কথাটার আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে 'ভয়ানক গিরগিটি'। কিন্তু ডাইনোসরেরা প্রকৃতপক্ষে গিরগিটি বা টিকটিকি জাতীয় কোন প্রাণী নয়। বরং তারা সরীসৃপ শ্রেণীর অন্তর্গত একটা আলাদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, যাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ অনেকাংশে বর্তমান সরীসৃপদের থেকে পৃথক এবং গিরিগিটি বা টিকটিকির থেকেও বৃহৎ আকৃতির। এবং তারা ছিল উষ্ণশোণিত এবং দ্বিপদ গমনে সক্ষম প্রাণী।

ইংরেজি Dinosaur শব্দটি প্রবর্তন করেন ইংলিশ জীবাশ্মবীজ্ঞানী Richard Owen। গ্রীক শব্দ ডেনিওস (Denios) এবং সাউরোস (Sauros) থেকেই Dinosaur শব্দটির উৎপত্তি। Denios অর্থ- 'ভয়ঙ্কর' আর Sauros অর্থ- 'টিকটিকি'। অর্থাৎ ডাইনোসর শব্দটির পুরো অর্থ হলো 'ভয়ঙ্কর টিকটিকি'।

এক নজরে ডাইনোসরের তথ্যঃ- Domain:- Eukaryota; Kingdom:- Animalia; Superphylam:- Deuterostomia; Phylam:- Chordata; Subphylam:- Vertebrata; Infraphylum:- Tetrapoda; Microphylum:- Amniota; Nanophylum:- Sauropsida; Superclass:- Diapsid; Class:- Reptilia; Subclass:- Archosauria; Superorder:- Dinosauria & Order :- 1. Ornithischia & 2. Saurischia!

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অর্থাৎ পাখিদের ডাইনোসর বলে চিহ্নিত করার আগ মূহুর্ত্ব পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা ডাইনোসরদেরকে মন্থর গতিসম্পন্ন, স্বল্পবুদ্ধি ও ঠান্ডা মেজাজের প্রাণী ছাড়াও অলস এবং অনুষ্ণশোণিত প্রাণী বলে মনে করতেন। কিন্তু ১৯৭০ এর দশক এবং তৎপরবর্তী অধিকাংশ গবেষণা থেকে অবশ্য জানা গেছে যে; পৃথিবীতে বসবাস রত প্রায় প্রত্যেকটা ডাইনোসরই ছিল উচ্চ বিপাক হার যুক্ত, অতিমাত্রায় সক্রিয় প্রাণী এবং তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য বিভিন্নভাবে অভিযোজিত হয়েছিল।

প্রজাতিঃ- ডাইনোসরের মধ্যে মূলত প্রজাতির বিভিন্নতা ছিল প্রচুর। এদের কিছু প্রজাতি ছিল মাংশাসী আবার কিছু প্রজাতি ছিল তৃণভোজী; কিছু প্রজাতি দু'পায়ে হাঁটতে পারত আবার কিছু প্রজাতি চারপায়ে হাঁটত। কোনোটি উচ্চতায় ছিল প্রায় ১০০ ফুট আবার কোনোটি ছিল ছোট্ট মুরগীর সমান। এ পর্যন্ত ডাইনোসরের আবিষ্কৃত প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫০০ প্রকার। তবে জীবাশ্ম রেকর্ডের ভিত্তিতে আরো প্রায় ১৮৫০ টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭৫% প্রজাতি বৈজ্ঞানীকদের আবিষ্কারের অপেক্ষায়। অবশ্য এর পূর্ববর্তী এক গবেষণায় পৃথিবীতে ৩৪০০ প্রজাতির ডাইনোসর ছিল বলে উল্লেখ করা হয়, যার বেশীর ভাগেরই অস্তিত্ব বর্তমানে টিকে থাকা জীবাশ্মে নেই বলে অনেক বিজ্ঞানীর ধারনা।

অনেক প্রজাতির ডাইনোসরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম নিচে দেয়া হলোঃ-
=>Saurischia: এই শ্রেনীর ডাইনোসরদের পশ্চাতদেশ দেখতে ছিল অনেকটা সরীসৃপদের মতো।
=>Theropods: মাংসভোজী ডাইনোসরের মধ্যে এই গোত্রটি অন্যতম।
=>Sauropods: এরা লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকত অথ্যাৎ তৃণভূজী। আর সেজন্য এদের ছিল অনেকটা জিরাফের মত খুব লম্বা লম্বা গলা। যা গাছের মগ ডালের কচি লতা-পাতা খেতে এদেরকে সাহায্য করতো।
=>Ornithischia: এরাও তৃণভূজী এবং জীবনের বেশিরভাগ সময় লতাপাতা খেয়ে জীবন ধারন করতো। এবং এদের মধ্যে কারো কারো পাখির মতো লম্বা ও সূচালু ঠোঁট ছিল।
=>Armoured dinosaurs: এদের পিঠে ছিল বড় বড় হাড় যা এদেরকে বিভিন্ন শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করত।
=>Ornithopoda: এরা “duck-billed” ডাইনোসরের অন্তর্ভূক্ত প্রাণী।
=>Pachycephalosauria: এসব ডাইনোসরের মাথা ছিল খুব শক্ত।
=>Ceratopsia: এরা শিংওয়ালা প্রজাতির ডাইনোসরের অন্তর্ভূক্ত। এই শ্রেনীর ডাইনোসরের খুব লম্বা লম্বা গরুর মত শিং থাকতো।


ডাইনোসরের আকার ও আকৃতিঃ- শ্রেণীবিন্যাসগত, অঙ্গসংস্থানগত ও পরিবেশগত দিক থেকে ডাইনোসর কথাটিকে বিভিন্ন প্রকারের কতকগুলি প্রাণীর একটি সাধারণ নাম হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সব কয়টি মহাদেশেই ডাইনোসরদের জীবন্ত ও প্রস্তরীভূত নানা প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে শাকাহারী ও মাংসাশী- উভয় প্রকার উদাহরণই রয়েছে। যদিও উৎপত্তিগতভাবে ডাইনোসরেরা দ্বিপদ, কিন্তু অবলুপ্ত অনেক চতুষ্পদ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, এবং কোনো কোনো প্রজাতি গমনের সময় প্রয়োজনমত দুই পা অথবা চার পা ব্যবহার করতে পারত। সমস্ত বিভাগের ডাইনোসরদের মধ্যেই শিং, হাড় ও চামড়ার পাত প্রভৃতি প্রদর্শনমূলক অঙ্গসংস্থানের নিদর্শন রয়েছে, এবং কোনো কোনো অবলুপ্ত প্রজাতির কংকালে হাড়ের বর্ম ও কাঁটার মত গঠন লক্ষ্য করা যায়। বিভাগ নির্বিশেষে ডাইনোসরদের অন্যতম সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল ডিম পাড়া ও বাসা বানানোর অভ্যাস। ওড়ার খাতিরে কিছু শারীরবৃত্তীয় বাধ্যবাধকতার জন্য আধুনিক পাখিরা আকারে ছোট হলেও প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরদের অনেকেই ছিল বিশালদেহী।

প্রজাতিভেদে ডাইনোসরের মধ্যে আকার ও আকৃতিগত দিক থেকে অনেক বিভিন্নতা ছিল। বৃহত্তম সরোপড ডাইনোসরেরা ৫৮ মিটার (১৯০ ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ এবং ৯.২৫ মিটার (৩০ ফুট ৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঁচু হত। তবুও উড়তে অক্ষম ডাইনোসর মাত্রই বিশালাকার হবে- এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ উড়তে অক্ষম ডাইনোসরদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই ছিল যারা দেখতে অনেকটাই ক্ষুদ্র/ছোট ধরনের। তবে বর্তমানে আবিষ্কৃত জীবাশ্মের বেশির ভাগই বড় মাপের ডাইনোসর- এ'কথা ঠিক। কিন্তু এর কারণ হল জীবাশ্মের আকার বড় হলে তা প্রকৃতির প্রতিকূলতা সহ্য করে প্রস্তরীভবন পর্যন্ত সহজে টিকে থাকতে পারে। এছাড়াও বৃহদাকার ডাইনোসরদের মধ্যে যেগুলোর নাম উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে একটি হলো Giraffatitan brancai যার উচ্চতা ছিলো ১২ মিটার(৩৯ ফুট), লম্বায় ২২.৫ মিটার(৭৪ ফুট) এবং ওজন ছিলো ৩০,০০০ থেকে ৬০,০০০ কেজি। তাঞ্জানিয়ায় এর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়।এছাড়াও আছে T Rex প্রজাতির ডাইনোসর, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৪০ ফুট এবং উচ্চতা ছিল ১৫ থেকে ২০ ফুট।

Diplodocus প্রজাতির আরেক ধরনের ডাইনোসর যারা লম্বায় ছিল ২৭ মিটার (৮৯ ফুট)। এর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয় আমেরিকায়। বিশালাকার তৃণভোজীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো Argentinosaurus zar, যার ওজন ৮০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ কেজি। এছাড়াও রয়েছে Diplodocus hallorum, যারা ৩৩.৫ মিটার লম্বা (১১০ ফুট) এবং ১৮ মিটার (৫৯ ফুট) উচ্চতাবিশিষ্ট ছিল। মাংশাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নাম হলো- 'Giganotosaurus, Carcharodontosaurus এবং Tyrannosaurus'।

তবে ডাইনোসর বলতে যে শুধু বিশালাকার দেহের জন্তু বোঝায় তা নয়, বরং খুবই ছোট আকারের ডাইনোসরও সেসময় ছিল। সবচেয়ে ছোট ডাইনোসর Anchiornis এর ওজন ছিল মাত্র ১১০ গ্রাম। তৃনভোজী Microceratus এবং Wannanosaurus এর দৈর্ঘ্য ৬০ সেন্টিমিটার (২ ফুট)। এছাড়াও জিজিয়ানিকাস (Xixianykus) নামক ডাইনোসরটির দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২০ ইঞ্চি)।

ডাইনোসরের খাবারঃ- ডাইনোসরের পার্থক্য যেমন আছে, ঠিক তেমনি আছে তাদের খাদ্যের তালিকার ভিন্নতা। সাধারণত ডাইনোসররা ফুড অ্যান্ড ফিডিং হ্যাবিটের দিক দিয়ে সর্বমোট তিনধরণের গোত্রে বিভক্ত ছিল----'Herbivore, Carnivore & Omnivore (সর্বভুক)।' এদের একটা গোত্র ছিল তৃণভূজী, একটা গোত্র ছিল মাংসাশী এবং অন্য আর একটা গোত্র ছিল সর্বভূক। তৃণভূজী গোত্রের ডাইনোসররা বিভিন্ন ধরনের কিট-পতঙ্গ, কচি ঘাস, গাছের লতা-পাতা এবং ফলমূল খেয়ে জীবন ধারন করতো। এবং মাংসাশী গোত্রের ডাইনোসররা সাধারণত সামদ্রিক মাছ, শামুক, ঝিনুক এবং হাঙ্গর সহ এমন কি তাদের অপর গোত্রীয় তৃণভূজী ডাইনেসরদেরকেও শিকার করে ধরে ধরে খেতো। আর সর্বভূক গোত্রের ডাইনোসররা আহার হিসাবে ঘাস, লতা-পাতাও আহার করতো; আবার সামদ্রিক মাছ সহ অন্যান্য তৃনভূজী ডাইনোসরদেরকেও শিকার করতো। এছাড়াও মাংসাশী গোত্রের ডাইনোসররা এতটাই ভয়ঙ্কর এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির ছিল যে, ক্ষুধার সময় তারা তাদের সন্তানদেরকেও অনেক সময় আহার হিসাবে ভক্ষণ করতো।
বাসস্থানঃ- তৎকালিন সময়ে পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটা অঞ্চলেই এই দানবীয় প্রাণীটির আধিপত্য ছিল বলে অধিকাংশ বিজ্ঞানী তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মহাদেশেই এমনকি বরফ আচ্ছাদিত মহাদেশ এন্টার্কটিকাতেও এই ডাইনোসরের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। আর সেটা থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন যে, শুধু একটা নিদ্রিষ্ট অঞ্চল নয় বরং গোটা পৃথিবী জুড়েই এই বিশাল দেহী প্রাণীটি প্রায় সুদীর্ঘ ১৬০ মিলিয়ন বছর যাবত তাদের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল।

২০০১ সালে এন্টার্কটিকা মহাদেশের স্থানীয় বাসিন্দা একজন কৃষক ভেড়া চরাতে গিয়ে বরফের স্তরের মাঝে একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম পেয়েছিলেন। তবে এবারের আবিষ্কার অস্ট্রেলিয়ায় গত ২৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এই খাদের আশপাশেই হয়তো আরো শত শত জীবাশ্ম পাওয়া যাবে বলে অনেক বিজ্ঞানীর ধারনা পোষণ করছেন।

আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিরির জীবাশ্ম বিভাগের প্রধান মার্ক লরেন জানান যে, ডাইনোসরের ফিজিওলজি, ইকোলজি এবং আচরণ বিদ্যার অনেক কিছুই আজ জানা সম্ভব হয়েছে। যদিও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দীর্ঘ যাত্রা কেবল শুরু হয়েছে। এদিকে বিজ্ঞানী মারফি মাল্টাতেই যে কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিটিস্ক্যান সেন্টার দ্বারা হৎপিন্ড, ফুসফুস, কিডনি এবং অন্য অনেক অঙ্গ পরীক্ষা করে অনেক কিছুই জানা সম্ভব হয়েছে। তবে এটা খুবই ব্যয়বহুল কাজ। বিজ্ঞানীদের ধারণা কোনোক্রমে যদি ডাইনোসরের কাঠামো উদ্ধার করা যায় তাহলে বিস্ময়কর এক ফল পাওয়া যাবে। যদিও ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের কোনো প্রাণীর কাঠামো খুঁজে পাওয়া চারটিখানি কথা নয়। আর উক্ত কাঠামো খুঁজে পাওয়া গেলে, ডাইনোসর আসলে পাখি নাকি সরীসৃপ ছিল; তা সম্পর্কে নতুন করে জানা যাবে। এদিকে নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োলজিস্ট 'নরি এস কুইস' একটি রেসকের হাড় নিয়ে পরীক্ষা করে নতুন এক তথ্য আবিষ্কার করেছেন। তিনি জানান, ডাইনোসরের হাড় থেকে যে ক্যালসিয়াম এবং নতুন টিস্যু তৈরি হয় তা বলে দেয় যে, ডাইনোসরের সঙ্গে পাখিদের সম্পর্ক বেশি। ১৯ শতকের গোড়ারদিকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পাখির পায়ের ছাপ হাড় পাওয়া গিয়েছিল পরে তা ডাইনোসরেরই বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ১৮৬১ সালে জার্মানির খনিজ শ্রমিকরা খনি থেকে একটি ডাইনোসরের কঙ্কাল আবিষ্কার করেন। আজ পর্যন্ত ডাইনোসরের যত কঙ্কাল পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এটাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্ব এবং তথ্যপূর্ণ। ওই কঙ্কাল থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, ডাইনোসরদের মধ্যে কিছু প্রজাতি ছিল যাদের দেহে পাখির পালকের মত পালক ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা জুরাসিক যুগের শেষ ভাগে ডাইনোসরগুলো ভিন্ন বৈশিষ্ট সম্পন্ন হয়ে উঠেছিল। তখন থেকে এদের পা উদ্ভব শুরু হয়। এদিকে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ঝড়ো আবহাওয়াময় উপকূলে যে মেরু ডাইনোসরের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়েছে যে ১০ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে ওই ডাইনোসরটি আর ৩৫ ডিগ্রি-৪০ ডিগ্রি দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা বলয়ের মধ্যে ছিল। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই ডাইনোসরের কঙ্কালের নাম দেয়া হয়েছে-'লিলিয়াফোরা'

পৃথিবী হতে চিরদিনের জন্য ডাইনোসরদের বিলুপ্তি হওয়ার মূল কারণঃ- আজ থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে এই পৃথিবীজুড়েই ডাইনোসরদের বিচরণ ও রাজত্ব ছিল। তাদের এই রাজত্বের সময়টা ছিল ১৬ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত দীর্ঘায়িত। তবে এসব ডাইনোসর পৃথিবীর বুক থেকে কেন ও কীভাবে বিলুপ্ত হলো, তার সঠিক কারণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। যদিও ডাইনোসরদের বিলুপ্তি নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মতামত ও ধারণা প্রকাশ করেছেন। একদল বিজ্ঞানীর অভিমত সম্ভবত পৃথিবীর পৃষ্ঠে ধূমকেতু বা উল্কার আঘাতের ফলেই যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল, আর তার ফলে পৃথিবীজুড়ে যে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছিল; তাতেই পৃথিবীর সব ডাইনোসররা মারা গিয়েছিল। অথবা এরা কোনো ভাইরাস বা পর্যায়ক্রমিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই বিলুপ্ত হয়েছে। এসব ধারণা বা মতবাদগুলো বিতর্কিত হলেও এখন পর্যন্ত এর সঠিক কোন সমাধান মেলেনি। ১৯৯৬ সালের অক্টোবর মাসে একটি স্বনামধন্য পত্রিকায় ডাইনোসর নিয়ে একটা ফিচার ছাপা হয়েছিল আর তাতে বলা হয়েছিল যে, আল্লাহর নবী হযরত নূহ (আ.) এর সময় এ পৃথিবী যে মহাপ্লাবণে ডুবে গিয়েছিল, তার ফলেই সব ডাইনোসর ঐ মহাপ্লাবণেই ডুবে মারা পড়েছিল। বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে এই পৃথিবীর ৭১.৪% জল ও ২৮.৬% হলো স্থল। আরো তথ্য হলো, এই পৃথিবীর স্থলভাগকে কেটে যদি সমান করা হতো তা হলে তা ২ মাইল বা ৩ কিলোমিটার পানির নিচে ডুবে থাকত। আর একারণে সেই মহাপ্লাবণের ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়াও বিজ্ঞানীদের হিসাব মতে পৃথিবীতে বছরে গড়ে ১০-১২টি উল্কা দেখা যায়। যার ৩-৫টি কক্ষচ্যূত হয়ে এ ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। এমনও বৈজ্ঞানিকরা বলে থাকেন যে, আজ থেকে প্রায় ২৩ কোটি বছর পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরের ওই পারে অবস্থিত মেক্সিকোর ইউকাটান জঙ্গলে বিশাল এক ধূমকেতু আঘাত হানে। আর সেই আঘাতের ফলে পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েই নাকি সারা বিশ্বের ডাইনোসররা মারা গেছে!

এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা এই পৃথিবী থেকে চিরকালের জন্য ডাইনোসর বিলুপ্তির অনেক গুলো কারণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। যার পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক যুক্তি এবং অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়ে আসছে। আসুন সেই সমস্থ কারণ গুলোও একটু জেনে নিইঃ-

১। উল্কাপাতঃ- ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের শেষের দিকে প্রচণ্ড গতিতে কোন বিশালাকারের উল্কা ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়েছিল। এর ফলে একটি মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিল। এই বিস্ফোরণের পর, তাৎক্ষণিকভাবে সমগ্র পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ ছাড়া সারা পৃথিবী ধুলা এবং জলীয়-মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। এই মেঘের আবরণ ভেদ করে সূর্যের কিরণ পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে না পারায়, সবুজ উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর ফলে ডাইনোসরদের খাদ্য খাটতি পড়ে এবং উত্তাপহীন পৃথিবীতে শীতল রক্তের এই ডাইনোসারগুলো মৃত্যুবরণ করে।

অনেকে উল্কাপাতের সময় উল্কার ভিতরের ইরিডিয়াম নামক ধাতুর বিকিরণকে দায়ী করেছেন বটে। তবে বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্টের কাছাকাছি স্তরে কোন ইরিডিয়ামের সন্ধান পান নাই। তারপরেও অনেকে এমন ধারণাও করেন যে- উল্কা খণ্ডের ভিতরই ইরিডিয়াম ছিল। এই তর্কবিতর্কের ভিতরই এক সময় বিজ্ঞানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্টে্রর আরিজোনা অঞ্চলের ফ্লাগস্টাফে একটি বিশাল গর্ত আবিষ্কার করেন এবং সেখানে তিনি একটি উল্কা-খণ্ডের সন্ধান পান। উল্লেখ্য ক্যানিয়ান ডিয়াব্লো (Canyon Diablo) নামক এই গর্তটির ব্যাস ১১৮০ মিটার এবং গভীরতা ১৭৫ মিটার। অস্টে্রলিয়াতে অপর একটি উল্কা পাওয়া যায়। এর ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে, বয়স নিরূপণ করা হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসর পূর্বকাল।

উল্কা-ধারণার বিপক্ষযুক্তিঃ- এই যুক্তির বিপক্ষবাদীরা প্রশ্ন তোলেন যে, এতবড় একটি বিস্ফোরণের ফলে শুধু মাত্র ডাইনোসরই ধ্বংস হবে কেন? যদিও প্রশ্নটার কিছু যৌক্তিক কারণ আছে তবে আজ পর্যন্ত এর কোনো সন্তোষজনক উত্তর পাওয়া যায় নাই।

২। খাদ্য হিসাবে ডাইনোসরের বিলুপ্তিঃ- সকল মাংসাশী ডাইনোসরগুলো সকল উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরদেরকে হত্যা করে। পরে, খাদ্যের অভাবে মাংসাশীরা অন্য মাংসাশী ডাইনোসর খেয়ে ফেলে। ফলে ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটে।

খাদ্য-ঘাটতি ধারণার বিপক্ষযুক্তিঃ- এই যুক্তিটিকে অনেকেই অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচনা করে থাকেন। কারণ, এই রকম ঘটনা ঘটলে, সবচেয়ে আগে উদ্ভিদভোজী ডাইনোসর বিলুপ্ত হলেও, মাংসাশী ডাইনোসর বিলুপ্ত হতো না। কারণ, মাংসাশী ডাইনোসররা শুধু ডাইনোসরদেরই হত্যা করতো না। খাদ্য নিয়ে এরা নিজেরা বিবাদ করার আগে— অন্যান্য প্রাণীদের হত্যা করতো। ফলে সকল বড় ধরনের প্রাণীই বিলুপ্ত হয়ে যেতো। আর যেহেতু বড় প্রাণীদের উত্তর-পুরুষেরা এখনও পৃথিবীতে রয়ে গেছে, সে কারণে মাংসাশী ডাইনোসরদের কিছু প্রজাতি এখনো টিকে থাকতো।

৩। বিষাক্ত গাছঃ- বিষাক্ত গাছে পৃথিবী ছেয়ে গিয়েছিল। উদ্ভিদভোজীর ডাইনোসরগুলো এই সকল গাছ খেয়ে মৃত্যুবরণ করার পর, মাংসাশী ডাইনোসরগুলো খাদ্যাভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

বিষাক্ত গাছ ধারণার বিপক্ষযুক্তিঃ- এই যুক্তিটি গ্রহণযোগ্য নয়, এই জন্য যে— পৃথিবীর সকল গাছ বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল এমন হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। অন্ততঃ বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের তেমন কোন বিষাক্ত গাছের সন্ধানও পান নাই। আর যদি এই বিষাক্ত গাছের বিষয়টি সত্যও হয়, তা হলে প্রশ্ন থেকে যায় যে, তাহলে অন্যান্য উদ্ভিদভোজী প্রাণীরা কি ভাবে বেঁচে রইল?

৪। স্থূলকায় শরীরের কারণেঃ- উদ্ভিদভোজীরা অত্যধিক খাবার খেয়ে খেয়ে এত মোটা হয়ে গিয়েছিল যে, এরা একসময় চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে মাংসাশী ডাইনোসারের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছিল।

স্থূল শরীর জাতীয় যুক্তির বিপক্ষযুক্তিঃ- এই যুক্তি উদ্ভিদভোজীদের জন্য খাটলেও মাংসাশীদের জন্য তা খাটে না। তাছাড়া অত্যন্ত মোটা হয়ে বয়স্ক ডাইনোসরের মৃত্যু হলেও, তাদের শাবক থাকবে না বা বংশ বৃদ্ধি হবে না এটাও তো ভাবা যায় না!

৫। তুষার-আমলের আবির্ভাবঃ- অকস্মাৎ তুষার-আমলের আবির্ভাবে সকল ডাইনোসর ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যুবরণ করে।

তুষার-আমলের বিরুদ্ধযুক্তিঃ- বিরুদ্ধবাদী বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেনে যে, ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের শেষে তুষার-আমল আসেনি।

৬। ক্রম অগ্নুৎপাতঃ- সারা পৃথিবী জুড়ে আগ্নেয়গিরিগুলো ক্রমরীতিতে অবিরত বিষাক্ত গ্যাস ও লাভা নিক্ষেপ করতে থাকে। ফলে ডাইনোসরগুলোর বিলুপ্তি হয়।

ক্রম অগ্ন্যুৎপাতের বিরুদ্ধযুক্তিঃ- ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের এই ধরনের অগ্ন্যুৎ্পাতের ঘটনা ঘটেনি। তা ছাড়া এই জাতীয় ঘটনা ঘটলে স্তন্যপায়ী, পাখি শ্রেণীর প্রাণী, এমনকি উদ্ভিদেরও বিলুপ্তি হতো।

সকল যুক্তিই খণ্ডন করা যায়, কিন্তু এই পৃথিবী থেকে যে ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটেছে, এটা তো খণ্ডন করা যায় না? এক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে চিন্তা করলে হয়তো সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছানো যেতে পারে। মেসোজোয়িক যুগের প্রাপ্ত জীবাশ্মের সূত্র ধরে খুবই জোরালো ভাবে বলা যায় যে, এই পৃথিবীতে ডাইনোসর বলে কোন প্রাণী এক সময় ছিল! কিন্তু বর্তমানে এরা যে আর এই পৃথিবীতে নেই এটাও তো সত্য?

প্রকৃতিতে কোন বিশেষ প্রজাতি বিলুপ্ত হবে কি হবে না, তা নির্ভর করে অনেকটা এই পৃথিবীর পরিবেশের উপর। এই পরিবেশগত কারণের ভিতর রয়েছে, আবহাওয়া, খাদ্য, রোগ, অন্য প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা এবং বংশবৃদ্ধিজনিত প্রতিকুলতা ইত্যদি। প্রকৃতির এই সকল উপকরণগুলোকে সহজে জয় করতে পারলেই যুগ যুগ ধরে একটি প্রজাতি এই পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারে। একথা ভাবার কারণ নেই যে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে এই পৃথিবী থেকে এক সময় হয়তো সকল প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আবার এটাও ভাবা যায় না যে, এক্ষেত্রে সকল প্রজাতিই বেঁচে থাকবে। একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ছাড়া। তবে বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিতে দেখলে, সকল প্রজাতির বিলুপ্তি হওয়ার মতো কারণগুলো যদি ক্রমাগত ঘটতেই থাকে, তা হলেই এক সময় সকল প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এই ধারণা থেকে অবশ্য মানুষকে বাদ রাখতে হবে। কারণ মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা প্ররিবেশকে বিভিন্নভাবে জয় করতে পেরেছে। তাদের মধ্যে এই পৃথিবীর সকল জীবজগতের প্রজাতিসমূহের ভিতর টিকে থাকার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে। তবে কোন কারণে যদি বৈরি পরিবেশ এই ক্ষমতাকে জয় করে ফেলে, তাহলে তখন সকল প্রজাতিরই বিলুপ্তি ঘটবে। এবার দেখা যাক ডাইনোসরের ক্ষেত্রে এই পরিবেশ কিভাবে তাদের ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠেছিল।

ডাইনোসর বিলুপ্তির সকল কারণই ছিল প্রতিকূল পরিবেশ। ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের শেষের দিকে ডাইনোসরের অধিকাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এর আগে অন্য কোন প্রজাতি বিলুপ্ত হয় নি, এমনটা বিজ্ঞানীরা দাবী করেন না। ক্রেটাসিয়াস অধিযুগের আগে, ডাইনোসরগুলোর বিলুপ্তির পিছনেও এই বৈরি পরিবেশের অবদান ছিল সব থেকে বেশি। আলোচনার সুবিধার্থে এই বৈরি পরিবেশকে কয়েকটি শর্ত দ্বারা বিভাজিত করে নির্দেশিত করা যায়।

=>মহাদেশগুলোর বিভাজনঃ- এখন যে পৃথিবীর মহাদেশগুলোকে যেভাবে পাই, সেভাবে সবসময় ছিল না এবং ভবিষ্যতেও তা থাকবে না। মেসোজোয়িক যুগের শুরুতে অর্থাৎ ট্রায়াসিক অধিযুগে পৃথিবীর অধিকাংশ ভূভাগ একটি অখণ্ড মহাদেশ হিসাবে বিরাজ করছিল। বিজ্ঞানীরা এর নামকরণ করেছিলেন প্যানজিয়া। এই অখণ্ড মহাদেশেই ডাইনোসরের উদ্ভব ঘটেছিল। পরবর্তী ২০ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসর পূর্ব-কালের ভিতরে; অর্থাৎ জুরাসিক অধিযুগে ডাইনোসরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই অধিযুগের শেষের দিকে প্যানজিয়া বিভাজিত হতে থাকে। আর ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসর থেকে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বৎসর পূর্বকালের ভিতর; অর্থাৎ ক্রেটাসিয়াস অধিযুগে মহাদেশগুলো বেশ কয়েকটি খণ্ডে বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই সুদীর্ঘ কালের ভিতর পৃথিবীর মহদেশগুলো যেমন বিভাজিত হয়েছে, তেমনি মহাদেশগুলো উত্তর-দক্ষিণ গোলার্ধ কিম্বা বিষ্যূব রেখা বরাবর সঞ্চালিত হয়েছে। ফলে বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলোর আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর মহাদেশগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হয়, তখন অখণ্ড মহাদেশ প্যানজিয়ার উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলও বিভাজিত হয়েছিল। ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্যও একই ধারায় ছিল না। এর ফলে কতকগুলো মৌলিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছিল। যেমন—

=> তাপমাত্রার পরিবর্তনঃ- বিচ্ছিন্ন মহাদেশগুলো যখন ক্রমান্বয়ে দূরে সরে যাচ্ছিল, তখন তার আবহাওয়ার পরিবর্তনও ঘটছিল। জীবজগতে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীদের তাপমাত্রার সাথে অভিযোজন করার ক্ষমতা সবচেয়ে কম। সেই কারণে ডাইনোসরদের উপর প্রভাব পড়েছিল সবচেয়ে বেশি। ফলে, বিভিন্ন মহাদেশের বিচিত্র তাপমাত্রাগত পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে পক্ষী বা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের উপর প্রভাব পড়েছিল কম। ছোট ছোট প্রজাতির সরীসৃপরা মাটির গভীরে বা পর্বতগুহায় আশ্রয় নিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়ে উঠলেও, বিশালদেহী ডাইনোসরদেরকে সেই তাপমাত্রার কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। বিশেষ করে চলমান মহাদেশগুলোর কোন কোন অঞ্চল যখন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছিল, কিংবা উত্তর-দক্ষিণ মেরু বরাবর যে সকল মহাদেশ স্থাপিত হচ্ছিল, সে সকল অঞ্চলে ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ঘটেছিল দ্রুত।

=> খাদ্যভাবঃ- মহাদেশগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল, তখন মহাদেশগুলোতে তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাতের অধিক্য বা অনাবৃষ্টি, তুষারপাত ইত্যাদির বিচারে পরিবেশ পাল্টে যাচ্ছিল। ফলে প্রাণিজগতের বিভিন্ন প্রজাতি যেমন লোপ পাচ্ছিল, তেমনি বহু প্রজাতির উদ্ভিদও বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে উদ্ভিদভোজী প্রাণিকূলের খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল প্রবলভাবে। বিশেষ করে উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরগুলো এর শিকার হয়েছিল প্রথম। তাপমাত্রাগত পরিবর্তনে এরা কাহিল হয়ে পড়েছিল, সেই সাথে পর্যাপ্ত খাদ্য না পাওয়ার কারণে, এদের বিলুপ্তি ঘটেছিল। অন্যদিকে মাংসাশী ডাইনোসরগুলো তাপামাত্রা এবং খাদ্য হিসাবে উদ্ভিদভোজী প্রাণীর অভাবে মারা গিয়েছিল একটু বিলম্বে।

=> রোগ ব্যাধিঃ- সনাতন পরিবেশে যখন সুস্থ-সবল ডাইনোসরগুলো বিচরণ করতো তখন, ডাইনোসরগুলোর উপর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসগুলো হয়তো ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। কিন্তু বৈরি পরিবেশের কারণে তাদের দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গিয়েছিল। তাছাড়া আবহাওয়াগত পরিবর্তনের কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসদের আক্রমণ করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছিল। সব মিলিয়ে ডাইনোসরগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছিল দ্রুত।

=> প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসঃ- সাধারণত দেখা যায়, দীর্ঘকাল অনুকূল পরিবেশ না পেলে, কোন কোন প্রজাতির যৌন স্পৃহা বা প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ডাইনোসরের কোন কোন প্রজাতি এই কারণেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

=> অন্যান্য কারণঃ- উল্কাপাত, অগ্ন্যুৎপাত, বিষাক্ত খাদ্যগ্রহণ ইত্যাদির কারণেও কোন বিশেষ অঞ্চলের ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে পারে, কিন্তু তা সকল ডাইনোসরের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এমন ধারণা করার কারণ নেই। তবে এক্ষেত্রে কোন বিশেষ অঞ্চলের ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে পারে। যেমন বর্তমান সময়ে যদি উল্কাপাতের কারণে সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়, তা হলে, রয়েলবেঙ্গল টাইগারের (চিড়িয়খানা ছাড়া প্রকৃতিগতভাবে) বিলুপ্তি ঘটবে। একই ভাবে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে পম্পেই নগরী যেমন চাপা পড়ে গিয়েছিল, তেমনটা হলে কোন বিশেষ প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। প্রজাতি মাত্রই বিষাক্ত খাদ্যকে সহজাত প্রবৃত্তিতে বর্জন করে। কোন কারণে, বিষাক্ত খাদ্য গ্রহণে কোন প্রজাতি দলে দলে মারা গেছে এমন ঘটনা বিরল। তবে কোন অঞ্চলের সকল খাদ্যদ্রব্য বিষাক্ত হয়ে পড়লে অন্য কথা। এর ফলেও বিশেষ দুই একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হলেও হতে পারে।

তথ্যসূত্রঃ- ছবি সহ প্রত্যেকটা তথ্যই ইন্টারনেটের ইংরেজি এবং বাংলা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা। নিচে সেই সমস্থ মাধ্যমের লিংক সমূহ দেওয়া হলোঃ-
০১। উইকিপিডিয়া & এনসাইক্লোপিডিয়া।
০২। ডাইনোসর সম্পর্কে আরো জানতে হলে পড়ুন।
০৩। ইউটিউব ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
০৪। বৈচিত্র্যময় প্রাণী ডাইনোসরের কথা।
০৫। ডাইনোসরের আগমন এবং হারিয়ে যাবার রহস্য।
০৬। ডাইনোসর বিলুপ্তির কারণ।
০৭। বিস্তারিত বর্ননা এখানে।

পুনশ্চঃ- বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির কল্যানে পৃথিবী নিত্য নতুন ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। আর সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে প্রকৃতি সহ গোটা মানব সমাজ। কিন্তু এই পরিবর্তনের ছোঁয়ায় ফেলে রেখে আসছি আমাদের স্মৃতি, বিভিন্ন সময়ে করা আমাদের নানাবিধ কার্যকলাপ। ঠিক যেমনি ভাবে বিভিন্ন চিহ্ণ ফেলে রেখে গেছে ডাইনোসর নামক রহস্যময় সেই ড্রাগন.........!!
Share:

2 মন্তব্য(গুলি):

Pages