ঠিক এমনই কয়েকজন সৌভাগ্যবানের কথা আজ আমি তুলে ধরবো, যারা মৃত্যুর একেবারে দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও তাকে বৃদ্ধঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিল এই সুন্দর পৃথিবীর বুকে............!
০১। মৃত্যু'র ছয়দিন পর মৃত ব্যক্তিকে রান্নাঘরে আবিষ্কার:- মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়ে মারা যান চীনা নাগরিক ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা 'লি জিউফেং'। লাশটা কফিনে পুরে তা রেখে দেওয়া হয় বৃদ্ধার শোবার ঘরে। মাত্র ৬ দিন পর হবে বৃদ্ধা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। এর আগ মূহুর্ত্ব পর্যন্ত লাশটাকে সেখানেই রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বৃদ্ধার নাতিপুতিরা (বৃদ্ধার ছেলে মেয়েরা এই পৃথিবীর পাট চুকিয়ে চলে গেছেন অনেক আগেই)। কিন্তু অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগের দিন তারা সেখানে গিয়ে দেখে কফিনের ডালা খোলা, লাশ নেই! সবাই হতভম্বের মত হয়ে যায়! এক সময় সম্ভিত ফিরে পেয়ে সবাই এবার লাশ খোঁজায় মনোনিবেশ করে। লাশ খুঁজতে খুঁজতে রান্নাঘরে গিয়েতো সবার চোখ ছানাবড়া! তাদের সবার সামনে জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছে তাদের মৃত দাদী, যে কিনা আজ থেকে পাঁচদিন আগে এই ইহলোক ত্যাগ করেছিল। অথচ তিনি এখন রান্নাঘরে রান্নাবান্নার কাজে ব্যস্ত! এত মানুষের ভিড় দেখে দাদী একটুও বিস্মিত না হয়ে বরং ঘাড় ঘুরিয়ে একটু মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন- 'ভীষণ খিদে লেগেছে! মনে হচ্ছে কতদিন খাইনি! তাই ভাবলাম নিজে কিছু খাবার তৈরি করি!'
এই ঘটনার ব্যাখ্যা খোঁজার মানুষের অভাব হয়নি। কিন্তু কেউই পারেনি!
০২। মৃত ছেলে জেগে উঠে পানি চাইলো:- এটি ব্রাজিলের একটি অঙ্গরাজ্যের ঘটনা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত দু'বছরের শিশু 'কেলভিন সান্টোস'কে হাসপাতালে ভর্তি করলেন তার মা-বাবা। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির একদিন পরেই সকলকে কাঁদিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেল কেলভিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কতৃক লাশ প্লাস্টিক ব্যাগে ভরে কেলভিনকে তার শোকাতুর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো। কেলভিনের লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর তা রাখা হলো একটি খোলা কফিনে। লাশ ঘিরে সারা রাত ধরে চলল পরিবারের কান্নাকাটি। পরদিন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঘন্টাখানেক আগেও ছেলের কফিনের পাশে বসে কাঁদছিলেন কেলভিনের বাবা। ঠিক তখনই হঠাৎ করে কফিনের ভিতরে উঠে বসলো শিশু কেলভিন! আর বলে উঠলো- 'আমাকে এক গ্লাস পানি দেবে বাবা?'
চোখের সামনে এমন অবিশ্বাস্য দৃশ্য দেখে সকলেই হতবাক হয়ে পড়লো। কেউ কেউ প্রচন্ড ভয়ে চিৎকার শুরু করলো। কিন্তু তারপরেও সবার মনে জেগে উঠলো আশার আলো। সবাই ভাবলো, হয়তো কোন অলৌকিক ক্ষমতার বলে বেঁচে উঠেছে তাদের সকলের নয়নের মনি অনেক আদরের কেলভিন।
০৩। মৃত্যুু'র ৪১ ঘন্টা পর জেগে উঠলো মৃতদেহ:- যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার বাসিন্দা 'ভ্যাল টমাস'কে ডাক্তাররা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিস্ময় বলে অভিহিত করে থাকেন। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। একদিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সংজ্ঞা হারালে ভ্যালকে হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বজনেরা। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও ভ্যালের হৃদস্পন্দন পাওয়া গেল না। এমন কি সামান্য পরিমাণ পালর্স-এর নড়াচড়াও বোঝা গেল না এবং অনেক উন্নত প্রযুক্তির মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষার পরেও তার ব্রেন ওয়েভও ধরা পড়লো না। এভাবেই কেটে যায় প্রায় ১৭ ঘন্টা। এক সময়ে তার শরীর প্রচন্ড ঠান্ডা এবং শক্ত হয়ে আসতে থাকে, যা মৃত্যুর সুস্পষ্ট লক্ষন। ফলে ডাক্তাররা ভ্যালকে মৃত ঘোষনা করে তার লাশকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু এরপরেও হাল ছাড়লনা ভ্যালের আত্মীয়স্বজন। তারা ভ্যালকে নিয়ে যান আর একটি বিখ্যাত হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তাররা ভ্যালকে রাখেন বিশেষ এক মেশিনের ভেতর, যেখানে তার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলা হয়। এভাবে টানা ২৪ ঘন্টা চলার পর, পূণরায় ভ্যালের শরীরের তাপমাত্রাকে আবারও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এই প্রকৃয়ায় তার হৃদস্পন্দন সাময়ীক সময়ের জন্য চালু হলেও কিছুক্ষন পর তা আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এবং ভ্যালের মধ্যে মৃত্যুর সমস্ত লক্ষণই সুস্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠতে থাকে। এত চেষ্টার পরেও যখন তাকে আর বাঁচানো সম্ভব নয় দেখে ডাক্তারা ভ্যালের শরীর থেকে সব টিউব এক এক করে খুলে ফেলতে থাকেন। ভ্যালের পরিবারও তাকে শেষ বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমন সময় সকলকে বিস্ময়ের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে অবিশ্বাস্য ভাবে জেগে ওঠে ভ্যাল এবং স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলা শুরু করে! ডাক্তাররা তাকে আবারও পরীক্ষা করে দেখেন, ভ্যাল পুরোপুরি সুস্থ এবং তার হার্টে আর কোন ধরনের সমস্যা নেই!
০৪। মৃত ঘোষণার ১২ ঘন্টা পর কেঁদে উঠলো শিশু:- বিট্রেনের এক হাসপাতালে সদ্য জন্মগ্রহণ করা এক শিশুকে পরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তাররা। শিশুটিকে একটি কফিনে পুরে সেটি সিল করেও দেওয়া হয়। সেই সাথে কফিনটি রাখা হয় হাসপাতালের মর্গে। সন্তানের শোকে কাতর মা-বাবার অনুরোধে ১২ ঘন্টা পর আবারও খোল হয় শিশুটির কফিন। ঠিক তখনই আশ্চর্য ভাবে নড়ে উঠে কিফিনটি! সেই সাথে সাথে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুদের মত কান্নাজুড়ে দেয় ঐ শিশুটিও! পরম মমতায় বাবা-মা বুকে তুলে নেয় শিশুটিকে। আর তারা তাদের নয়নের মনির নাম রাখেন 'লুজ মিলাগারোস ভেরোন'। যার অর্থ- 'অলৌকিক রশ্মি'!
০৫। কবর দেওয়ার আগেই জেগে উঠলেন মৃত ব্যক্তি:- হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ফাগিলু মুখামেজিয়ানভ নামের মধ্য বয়সী একজন রুশ মহিলা। ডাক্তাররাও তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মহিলার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় শোক জানাতে আসেন তার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবরা। কিন্তু কবর দেওয়ার আগ মূহুর্ত্বে সকলকে বিস্মৃত করে দিয়ে হঠাৎ করে জেগে উঠলেন মৃত ঐ মহিলা। এবং তাকে জীবিত কবর দেওয়া হচ্ছে ভেবে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। এর কিছুক্ষন পরেই হার্টফেল করে আবারও মারা গেলেন তিনি। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে আবারও মৃত ঘোষণা করলেন। তবে এবার আর জাগতে পারলেন না ফাগিলু!
০৬। মেয়ের কান্নায় সাড়া দিলেন মৃত মা:- ডাক্তার মৃত ঘোষণার পর এক মহিলার লাশ প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে মর্গের ফ্রিজে রাখার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হলো। পরদিন মৃত মাকে শেষ বিদায় জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো তার একমাত্র আদরের শিশু কন্যা। আবেগাপ্লুত হয়ে প্রিয় মাকে জড়িয়ে ধরলো সে। আর তখনই ঘটলো এক আশ্চার্যজনক ঘটনা! সেই মৃত লাশটা আবারও নিশ্বাস নিতে শুরু করেছে! ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে মহিলাকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে গেল, এবং দেওয়া হলো লাইফ সাপোর্ট। কয়েক ঘন্টা এভাবে লাইফ সাপোর্টে রাখার পর অবশেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেলেন সেই মহিলা। এই চমকপ্রদ ঘটনাটি ঘটেছিল ব্রাজিলেরই একটি হাসপাতালে।
০৭। মর্গের ঠান্ডায় মৃত ব্যক্তির হাঁপানি:- দক্ষিন আমেরিকার এক ব্যক্তি হাঁপানি রোগে মারা গেলে তার লাশ রাখা হয় মর্গের ফ্রিজারে। কিন্তু এভাবে দুইদিন রাখার পর ফ্রিজারের ভিতর থেকে ভেসে এল চিৎকার- 'আরে ঠান্ডায় মরে গেলাম তো?'
মর্গে কর্মরত লোকজন দৌঁড়ে গিয়ে ফ্রিজার খুলে দেখে প্রচন্ড ঠান্ডায় লাশটা ভীষণ রকমের চেঁচামেচি করছে। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, আর হাঁপানির যন্ত্রনায় ছটফট করছে। সাথে সাথে লাশটিকে মর্গ থেকে বের করে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে সেই মৃত লাশ!
০৮। কফিন থেকে বলে উঠলো আমাকে মারতে চাও নাকি?:- জিম্বাবুয়ের এক হোটেলের একজন মহিলা কর্মচারী কাজ করতে করতে হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ডাক্তার পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে সে আর এই পৃথিবীতে বেঁচে নেই্। হোটেল থেকে থানায় খবর দিলে থানা থেকে পুলিশ আসে লাশ নিতে। কিন্তু লাশ নিয়ে মাঝরাস্তায় যাওয়ার পর যা ঘটলো তা দেখে পুলিশ বেচারাদের আত্মারাম খাঁচা ছাড়ার জোগাড়। ঐ মৃত নারী সোজা উঠে বসে চিৎকার করে বলতে লাগলো- 'আমাকে কি খুন করতে চাও তোমরা?'
০৯। তিনদিন একটানা মর্গে থাকার পর মৃত ব্যক্তির পূনজীবন লাভ:- 'হার্ডি লুদমিলা স্টেবলিসকায়ার' জান নিতে এসে বার বার হেরে যাচ্ছে যমদূত। কঠিন জীবনীশক্তির অধিকারী ৬১ বছর বয়সী এই রুশ মহিলা একবার নয়, দু' দুবার মৃত্যু থেকে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। বছর চার আগে হঠাৎ বাদ্ধক্যজনিত কারণে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে লুদমিলাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে। লুদমিলার মেয়ে অ্যানাসতাসিয়া কয়েকদিন পর মার শারীরিক অবস্থার খবর জানতে হাসপাতালে ফোন করলে ডাক্তাররা তাকে জানান যে, তার মা আর বেঁচে নেই। এ খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে অ্যানাসতাসিয়া। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের কাছে এই শোক সংবাদ পৌঁছে দিয়ে নিজে মা'র অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করেন। কেনা হয় প্রচুর ফুল, দামী কফিন এবং তৈরি হয় কবর। যার জন্য খরচ হয় প্রায় ৬০ হাজার রুবল। কিন্তু সবই যায় বিফলে। কারণ হাসপাতালে গিয়ে অ্যানাসতাসিয়ার চক্ষু চড়কগাছ। এক ডাক্তার দৌড়ে এসে তাকে জানান, তার মা মরেনি, এখনও বেঁচে আছেন! অ্যানসতাসিয়া ছুটে মা'র কাছে যান। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মা কাঁদতে কাঁদতে জানান- 'হাসপাতালে ভর্তির পর তার কিছু মনে নেই। হঠাৎ তীব্র ঠান্ডায় জ্ঞান ফিরে আসলে তিনি হাসপাতালের মর্গে নিজেকে আবিষ্কার করেন।'
আর ডাক্তাররা অ্যানাসতাসিয়াকে জানান- 'লুদমিলা মারা গেছেন এমন নিশ্চিত হয়েই তাকে মর্গে রাখা হয় এবং সেখানে আজ ধরে তিনদিন ছিলেন তিনি।'
এর ঠিক এক বছর পর আবারও লুদমিলা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সংজ্ঞা হারালে ডাক্তাররা পরীক্ষার করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু আবারও মৃত্যুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাত্র কয়েকঘন্টা বাদে 'বেঁচে ওঠেন' তিনি।
তথ্যসূত্র:- আমার বেশ কিছু প্রিয় শখের মধ্যে একটি অন্যতম প্রধান শখ হলো, পত্রিকা থেকে এমন সব চমকপ্রদ এবং ইন্টারেস্টিং ঘটনার কাটিং সংগ্রহ করা। অনেক আগে থেকেই আমি সংবাদ পত্র থেকে কাটিং সংগ্রহ করি। কোন সংবাদ পত্রের বিশেষ কোন ঘটনা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাথে সাথে আমি সেটা কেটে নিজের কাছে পরম যত্নে সংগ্রহ করি। আজকে আমার শেয়ারকৃত এই ফিচারটিও ঠিক তেমনই একটা কাটিংয়ের ঘটনা। গত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৩ সালের 'দৈনিক ইত্তেফাক' পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা থেকে এই কাটিং টা আমি সংগ্রহ করি। মূল লেখক:- 'আশেক খান আলেখীন'। আমি তার লেখাটিকে যতটা সম্ভব সাঁজিয়ে গুছিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। সংবাদটির কোন অনলাইন লিংক না থাকায় সেটা তথ্যসূত্রের সাথে যোগ করতে পারলাম না বলে আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত!
বিঃ দ্রঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন